আলাউদ্দিন, উখিয়া :
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় টানা প্রবল বর্ষণে রোহিঙ্গাসহ তিনজন নিহত হয়েছে। পাহাড় ধসসহ ভারি বর্ষণে পাহাড়ি ঢল ও খালের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানবন্দি হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। অন্তত পাঁচ শতাধিক গৃহপালিত পশুপাখির মৃত্যুসহ ভেঙে গেছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটা ও ভোর চারটার দিকে (৩ জুলাই) উখিয়ার বালুখালী জুমের ছড়া ৮ (ইস্ট) ও মরাগাছতলা ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহত দুজন হলেন, ক্যাম্প-১১-এর এফ-১ ব্লকের দিল মোহাম্মদের ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন (২১) ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আলম ও রোহিঙ্গা সাহারা খাতুন দম্পতির ছেলে সিফাত উল্লাহ (১৩)। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন এ তথ্য জানান।
অপরদিকে উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব মরিচ্যা এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে মো. রাকিব (৭) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৩ জলাই) বিকাল পৌনে চারটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সে ওই ওয়ার্ডের আলি আকবরের ছেলে।
জানা গেছে, বাড়ির পাশে রাস্তার কালভার্টের নিচে মাছ ধরার জন্য তার বাবার পাতা জালে মাছ লেগেছে কি না দেখতে যায় রাকিব। একপর্যায়ে পানির স্রোতের সঙ্গে সে জালের ভেতর ঢুকে আটকা পড়ে এবং জাল থেকে বের হতে না পেরে সেখানেই মারা যায়। পরে স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এদিকে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে খেটে খাওয়া দিনমজুরসহ কর্মজীবী সাধারণ মানুষেরা বিপাকে পড়েছে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। চলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ।
উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জালিয়াপালং ইউনিয়নের বাসিন্দারা। নিম্ন ও উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় এ ইউনিয়নের মানুষ প্লাবিত হয়েছে বেশি। প্রাণ হারিয়েছে শত শত গরু, মহিষ, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন গৃহপালিত পশুপাখি।
জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং, রত্নাপালং, রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের দায়িত্বরত বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি তাদের এলাকার দুরবস্থার কথা জানিয়েছেন। ব্রিজ, কালভার্ট ও ঘরবাড়ি ভাঙার তথ্যসহ বেশকিছু রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে বলে জানান তারা। এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা না আসায় আপাতত ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক জনপ্রতিনিধি।
এরইমধ্যে বুধবার (৩ জুলাই) বিকালে উপজেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন ও বানভাসি মানুষের খোঁজ নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন।
ইউএনও তানভীর হোসেন বলেন, কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। তাদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি প্লাবিত বেশকিছু এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা আসা মাত্রই ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
পাঠকের মতামত